যেসব লক্ষনে বুঝবেন ছোট্ট শিশুর অটিজম

অটিজমে আক্রান্ত শিশু মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকে এবং তার আচার-আচরণে থাকে নানা অসংগতি। তিন বছর বয়সের আগে এই রোগের উৎপত্তি ঘটে। বিশ্বব্যাপী হু হু করে বেড়ে চলেছে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা, প্রতিবছর ১৫ শতাংশ বাড়তি হারে। প্রতি ১১০ শিশুর একজন এতে ভুগছে।

ছেলেশিশুদের মধ্যে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার হার চার গুণ বেশি। অটিজমে আক্রান্ত শিশু সবার সঙ্গে মেলামেশার ভাষা খুঁজে পায় না, সামাজিক আচরণগুলো রপ্ত করতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, শিশুটির ব্যবহারের ধরন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকে যায় এবং একই আচরণ বারবার করতে থাকে।

কারণ

এই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ নেই।

জেনেটিক ও পরিপার্শ্বগত প্রভাব যৌথভাবে দায়ী বলে মনে করা হয়।

লক্ষণ

১২ মাস বয়স : আঙুল দিয়ে কোনো কিছু দেখিয়ে দেয় না, হাত নেড়ে বাই বাই দেয় না।

১৬ মাস বয়স : মা, বাবা, এ রকম একটা শব্দও বলে না।

২৪ মাস বয়স : দুই শব্দের কোনো বাক্য; যেমন—‘আমি খাব’ বলতে পারে না।

এ ছাড়া অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা চোখের কোনা দিয়ে দেখে। পরিপূর্ণভাবে কারো সঙ্গে চোখে চোখ রেখে তাকে দেখা, কথা বলে না। কথা বলে না তবে শব্দ আওড়ায়, তোতাপাখির বুলির মতো, নিছক নিজের খুশিমতো নিজের যেখানে আগ্রহ তা নিয়ে। কেউ একটু ঘরে সাজিয়ে রাখা ফার্নিচার অদলবদল করে দিলে খ্যাপাটে হয়ে ওঠে। ঘ্রাণ, স্বাদ, শব্দ, দৃশ্য ও স্পর্শ—প্রতিটি ইন্দ্রিয় তার অত্যন্ত স্পর্শকাতর থাকে, খানিক শব্দেই দুই হাত দিয়ে কান ঢেকে রাখে।

চিকিৎসা

এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত শিশু বিকাশ কেন্দ্রে বা শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। কেননা এগুলোই হতে পারে অটিজম স্পেকট্রাম ডিস-অর্ডার ‘এএসডি’-এর প্রথম রোগ লক্ষণনামা।

অটিজম শিশুদের প্রায় ১০ শতাংশে অন্যান্য অসুখও জড়িয়ে থাকে; যেমন—অতি দুরন্তপনা (এডিএইচডি), মৃগী রোগ, চোখে দেখা, কানে শোনার সমস্যা প্রভৃতি।

দ্রুত রোগ নির্ণয় করে ‘বিহেভিওরাল থেরাপি’ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসায় অনেকের তাড়াতাড়ি উন্নতি দেখা যায়।

পাঁচ বছর বয়সের আগে যদি একনাগাড়ে দুই বছর এই প্রগ্রাম চালানো যায়, তবে সুফল মেলে।

তবে যেসব অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ছয় বছর বয়সেও মুখে বোল ফোটেনি, তাদের উন্নতি কম হয়।

এই অসুখের নিরাময়ে সহজ কোনো বিধান নেই। তাই ধৈর্য ধরে অটিজম চিকিৎসা করাতে হবে।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল