জরায়ুর মুখের ক্যান্সার এখন প্রতিরোধযোগ্য, দরকার সচেতনতা

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ ৭০ হাজার নারী সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে আট হাজার ২৬৮ জন নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।

কারণ

জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয় হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসকে। প্রায় ১০০টির ওপর এইচপিভি আছে।

এর মধ্যে এইচপিভি ১৮ ও ১৬ জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য দায়ী এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরপরই ক্যান্সার হয় না। জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের জন্য ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লেগে যায়। ফলে এই ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য অনেক সময় পাওয়া যায়।

ঝুঁকিতে আছে যারা

⬤ অল্প বয়সে বিয়ে ও যৌ’ন মিলন
⬤ অল্প বয়সে গর্ভধারণ এবং অধিক সন্তান ধারণ
⬤ দীর্ঘদিন গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন
⬤ বহুগামিতা
⬤ নিরাপদ যৌ’ন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব
⬤ স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
⬤ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অপুষ্টি

যদি এই ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না পায় তবে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

লক্ষণসমূহ

⬤ অনিয়মিত মাসিক
⬤ যৌ’ন সঙ্গ’মের সময় অথবা পরে অস্বাভাবিক রক্তস্রাব
⬤ অতিরিক্ত সাদা স্রাব
⬤ ময়লা বা বাদামি পানির মতো দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
⬤ ক্ষুধামান্দ্য, ক্লান্তিভাব
⬤ তলপেট, কোমর ও পায়ে তীব্র ব্যথা
⬤ ওজন কমে যাওয়া
⬤ বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য
⬤ কোনো প্রকার লক্ষণ না-ও থাকতে পারে।

শনাক্তকরণ

এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য স্ক্রিনিংয়ের ওপর পর্যন্ত জোর দিতে (ক্যান্সার শনাক্তকরণ) বলা হয়েছে।

⬤ ভায়া
⬤ প্যাপ্সমিয়ার
⬤ কলপোসক্লোপি
⬤ কল্পোকোপির সাহায্যে সন্দেহজনক স্থান থেকে সারভাইক্যাল টিস্যু নিয়ে বায়পসি পরীক্ষা করা
⬤ স্ক্রিনিং পরীক্ষা সাধারণত বিয়ের তিন বছর পর থেকে তিন বছর অন্তর করাতে হয় ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত।
⬤ এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট

প্রতিরোধব্যবস্থা

⬤ ভ্যাকসিন প্রদান
⬤ অল্প বয়সে বিয়ে ও বাচ্চা গ্রহণ নিষেধ
⬤ বহুগামিতা পরিহার
⬤ জন্মবিরতিকরণ বড়ি স্বল্প মেয়াদে গ্রহণ

সারভাইক্যাল ক্যান্সারের প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিনেশন প্রগ্রাম এখন যুগান্তকারী প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে বহুল আলোচিত বিষয়। এই টিকা ইপিআইয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি হতে দশম শ্রেণির বালিকাদের জন্য টিকার নতুন শিডিউল করা হয়েছে। দুই ডোজ টিকা দেওয়া হবে সরকারিভাবে। ১৫ থেকে ৪৫ বছরের নারীরাও এই টিকা নিতে পারবে প্রাইভেট সেক্টর থেকে।

চিকিৎসা

জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য রয়েছে একাধিক চিকিৎসাব্যবস্থা। চিকিৎসকের সাহায্যে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।

⬤ সার্জারি অথবা শল্য চিকিৎসা
⬤ রেডিওথেরাপি
⬤ কেমোথেরাপি
⬤ ইমিউনো থেরাপি
⬤ টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদি

□ লেখক : স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন, কনসালট্যান্ট, ওজিএসবি ও আইআরসিএইচ, ঢাকা