তখন ইন্টার্নশীপ করি। গাইনি ওয়ার্ডে হঠাৎ এক রোগী ভর্তি হল, সারা মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ । আমরা হতবাক। এ কেমন রোগ! সেই শুরু। যদিও আমার জীবনে ওনার মত এ রোগের এমন ভয়াবহ অবস্থা আমি আর কোন নারীর দেখিনি। হয়তো সেটা ওনার সচেতনতার অভাবের কারণে। এখন শহর গ্রাম সব অঞ্চলেই নারীরা মোটামুটি সচেতন। ঠোঁটের উপর হাল্কা গোঁফের রেখা দেখা সাথে সাথেই সোজা পার্লারে গিয়ে আপার লিপ প্লাক করে নেন। শরীরে চুলের আধিক্য দেখা দিলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
কি এই রোগ, যেখানে নারী শরীরে পুরুষালি চিহ্নের আধিক্য মিলে? এই অদ্ভুত রোগটির নাম জানার আগে জেনে নেয়া ভালো কেন এই রোগের এমন লক্ষণ-আচরণ!
আমাদের প্রত্যেকের শরীরই কিছু হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই হরমোনের অসামঞ্জস্যতা তৈরি করতে পারে ভয়াবহ সমস্যা। নারী এবং পুরুষের শরীরের ভিন্ন ভিন্ন হরমোনের আধিক্যের প্রভাবেই তার বাহ্যিক এবং আচরণগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। এখন কোনভাবে যদি কোন মেয়ের শরীরে পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে একজন পুরুষের মতই তার শরীরে পুরুষালি স্টাইলে অবাঞ্ছিত লোমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, মুখে ব্রণের আধিক্য দেখা যেতে পারে। আবার ঠিক এই একই কারণে তার মেয়েলী লক্ষণগুলোতে কিছু অস্বাভাবিকতাও পরিলক্ষিত হয়। যেমন, পিরিয়ডের অস্বাভাবিকতা। অর্থাৎ তার পিরিয়ড নিয়মিত হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে পিরিয়ডের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।
ইদানীং এই সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে সংখ্যাধিক্যের দিক থেকে। বিশেষত: প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে জরিপ করলেই দেখা যায় দৈনন্দিন প্র্যাকটিসে এটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। যদিও শুরু করেছিলাম অবাঞ্ছিত লোমের আধিক্য দিয়ে। তবে এটা এই রোগের প্রাইমারি লক্ষণ নয়।
মূলত: এই রোগের রোগীরা আসে অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়ে। মাসে মাসে পিরিয়ড হয় না, এটাকেই প্রধানত: গুরুত্ব দিয়ে থাকে মেয়েরা। পুরুষালি চুলের কিছু আধিক্য সাধারণত: স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নেয় বেশিরভাগ রোগী। কেননা সাধারণত এটা ততো বেশি প্রকট আকার ধারণ করে না। আমি প্রথম যে রোগীটার কথা বলেছিলাম, তেমন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
এই রোগের দ্বিতীয় লক্ষণীয় লক্ষণ হল শারীরিক স্থূলতা। এদের সাধারণত শরীরের মধ্যভাগের চর্বির পরিমাণ অতিরিক্ত হয়। এখানে একটা কথা না বললেই না, শরীরে চর্বির পরিমাণ যত বাড়ে, বাড়তে থাকে হরমোনের অসামঞ্জস্যতা। এর ফলে পিরিয়ডের অস্বাভাবিকতাও বাড়তে থাকে।
এখন নিশ্চয় লক্ষণগুলোকে অনেক চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আমাদের আশেপাশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক। কিছু স্থূল ধাঁচের, অনিয়মিত পিরিয়ড, শরীরে অবাঞ্ছিত লোমের পরিমাণ কিছুটা বেশি, এই লক্ষণগুলো এখন খুবই সাধারণ। অনেক ক্ষেত্রে অনেকে এই লক্ষণগুলোকেও আমলে নেয় না। এরা আরো কিছু সময় ক্ষেপণ করে ডাক্তারের কাছে আসে সাবফার্টিলিটি নিয়ে। তার মানে বুঝতেই পারছেন, এই রোগ সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বাঁধা সৃষ্টি করে।
রোগটির নাম কিছুটা খটমটে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। নামটা শুনলেই অনেকেই আঁতকে উঠে। আরে বাপরে! তাহলে ওভারিতে সিস্ট হয়ে গেছে! এখন তো অপারেশন করতে হবে। না, না! এই সিস্ট ঠিক সেইরকম সিস্ট না যা সময়ের সাথে সাথে আকারে বড় হবে। এখানে ছোট ছোট সিস্ট ওভারির চারপাশে মালার মত সাজানো থাকে। এই সিস্টগুলোর ভেতরে থাকে এন্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোন।
এদের হরমোন টেস্ট করলে দেখা যায় এদের এন্ড্রোজেন বেশি থাকে। মেয়েলি দুই হরমোন এফএসএইচ এবং এলএইচের মধ্যে এলএইচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এই দুই হরমোনের স্বাভাবিক সমতা নষ্ট হয়। প্রোল্যাকটিন হরমোনের আধিক্য পাওয়া যেতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতাও দেখা যেতে পারে।
এই যে হরমোনের অস্বাভাবিকতা, এগুলোর কারণেই পিরিয়ডের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। নিয়মিত ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বক নিঃস্বরণ না হওয়ার কারণে একদিকে যেমন নিয়মিত পিরিয়ড হয় না বা হলেও অনেক ক্ষেত্রে ডিম্বকবিহীন পিরিয়ড হয়, অন্যদিকে সন্তান ধারণেও সমস্যা দেখা দেয়।
কেন এটি সময়মত চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন? সন্তান ধারণে সমস্যা ছাড়াও এই রোগের সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টি হচ্ছে, এই রোগে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়। অর্থাৎ এদের ডায়াবেটিস হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। শরীরে অতিরিক্ত চর্বির কারণে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এমনকি সম্ভাবনা থাকে এন্ডোমেট্রিয়াল(জরায়ুর ভেতরের স্তর) ক্যান্সার হওয়ারও। যদিও এসবই সম্ভাব্য বিলম্বিত সিক্যুলি।
আশার কথা হচ্ছে, এই রোগের লক্ষণগুলো ওষুধের মাধ্যমে সাপ্রেস বা বাঁধাগ্রস্থ করে রাখা সম্ভব। যেমন, সাধারণ পিল খেয়েই পিরিয়ড নিয়মিত করা যায়। পিল ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং লোম নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। সুতরাং, খুব সাধারণ লো ডোজ পিল খেয়ে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সক্ষম।
আরও আশার কথা হচ্ছে, হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে ডিম্বক নিঃস্বরণের ওষুধ দিলে সাধারণত খুব সহজেই এরা সন্তান ধারণও করে। মেটফরমিন নামক একটা মাত্র ওষুধের মাধ্যমে বিপাকীয় সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অন্যদিকে লেজার থেরাপির মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে শরীরের অশোভনীয় অবাঞ্ছিত লোমের।
নিরাশার কথা হচ্ছে, এই রোগ একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না। এটি ডায়াবেটিসের মত নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে হয়। আর এ কারণেই এটি সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি।
সবশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলবো এখন। সেটি হল, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। শুধুমাত্র ওজন নিয়ন্ত্রণ করেই এই রোগের বেশিরভাগ লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, এখানে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়। আবার ওজন যত বাড়তে থাকে, রোগ তত জটিল আকার ধারণ করে। সুতরাং, নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা ডিজিজ বংশগতভাবেও হতে পারে। ইদানীং পরিবেশগত কারণেই সম্ভবত এই রোগের সংখ্যাধিক্য উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা। লাইফস্টাইল পরিবর্তন, অল্প বয়স থেকেই স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে রাখা, পিরিয়ডের সমস্যা হলে সময়মত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ ইত্যাদি উক্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
সুতরাং, নিয়ন্ত্রিতভাবে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করুন। পিসিওস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারী জীবন উপভোগ করুন।
Realted Tag:
Marketa Vondrousova Wimbledon Shoe Brush Body Pillows Pillow Cubes Purple Pillow Sanitation Towel Superfeet Insole The Woman king Showtimes Top Women Boxers in the World Electric toothbrush charger Artificial Grass for Dogs Flare Leggings 4K Laptops