ইউরিক এসিড ও গেঁটে বাত
গেঁটে বাত বা গাউট (Gout) প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারনত না খাওয়া, অভাবী বা অপুষ্টির শিকার মানুষেরা এ রোগে আক্রান্ত হয় না। তাই এটাকে ধনীদের রোগও বলা হয়ে থাকে। এতে সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি বা এর আশেপাশের টিস্যুতে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল জমা হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে। সাধারণত এ রোগে মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা ৫ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি পুরুষ এবং বৃদ্ধা মহিলাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষণীয় প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস। এ রোগে পুরুষেরা সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সে এবং মহিলারা মেনোপজের পর বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার এটি ষাট বা সত্তর বছর বয়সেও হতে পারে। সাধারনভাবে বয়স বৃদ্ধি ও রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। রক্তে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো পুরুষের ক্ষেত্রে ২.০-৭.০ mg/dL ও নারীদের ক্ষেত্রে ২.০-৬.০ mg/dL। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি থাকে তবে বয়স ও ওজনের সাথে সাথে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রাও বাড়ে।
গেঁটে বাতকে প্রধানত দুই রকমের হতে পারে। যেমন- প্রাইমারি গাউট (এটি প্রধানত ছেলেদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের বেশি বয়সে এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং প্রদাহজনিত কারণেই সাধারনত এই রোগের সৃষ্টি হয়) এবং সেকেন্ডারি গাউট (এটি মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হয় বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়সে এর ঝুঁকি বাড়ে এবং এটি মূলত কিডনি বিকলতার কারণে কিংবা কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে হতে পারে)।
গেঁটে বাত এর লক্ষণ
গেঁটে বাত রোগটির উপস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ে খুব বেশি অনুভব করা যায় না। গেঁটে বাত মূলত শরীরের জয়েন্টগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণত হঠাৎ করেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং ২-৬ ঘণ্টার মাঝে এর তীব্রতা প্রকাশ পায়। শরীরের জোড়াস্থানগুলো ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং যন্ত্রণা করে। সচরাচর সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হঠাৎ করে রোগী এ ব্যথা অনুভব করেন। এটি সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলে অথবা হাঁটুতে বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও এটি গোড়ালির জয়েন্ট, মধ্য পায়ের জয়েন্ট, হাঁটুর জয়েন্ট, হাতের ছোট ছোট জয়েন্ট, কব্জির জয়েন্ট বা কনুইর জয়েন্টেও হতে পারে। আবার পরবর্তী ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ রোগটি আপনা আপনি সেরেও যেতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও এক ধরনের নকল গেঁটে বাত ধোকা দিতে পারে এবং ঝামেলা বাড়তে পারে। এতেও গিরা ফুলে যায়, লাল হয় বা ব্যথা হয়। যদিও সব লক্ষণগুলো একই রকমের, কিন্তু চিকিৎসক যদি পরীক্ষাগারে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই এই নকল গেঁটে বাতের লক্ষণগুলো শুনে চিকিৎসাপত্র দিয়ে দেন তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা বাড়তে পারে।
প্রধান প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গসমুহ নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ
হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়ে ২ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
প্রায়শই ভোরবেলায় তীব্র ব্যথায় রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে।
এর সাথে জ্বর ও অবসাদগ্রস্ততা থাকতে পারে।
ব্যথা কমে গেলে আক্রান্ত স্থান চুলকায় ও চামড়া উঠে যেতে পারে।
ব্যথা এতই তীব্র হয় যে রোগী পায়ে মোজা পরতে পারেনা, আক্রান্ত জয়েন্ট বেশ ফুলে যায় এবং চামড়া চকচকে লাল হয়ে যায়।
৫ থেকে ৬ দিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
কেউ কেউ একবার আক্রান্ত হবার পর দ্বিতীয়বার আর আক্রান্ত হয় না আবার অনেকেই কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারে।
এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে সেক্ষেত্রে ক্রনিক গাউটে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এতে জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা থাকে।
দীর্ঘদিন রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
জয়েন্ট ও এর আশেপাশের টিস্যুতে ক্রিস্টাল জমা হয়ে নডিউল বা দলা বা টোফাস তৈরি করতে পারে। আবার টোফাসে ঘা হতে পারে, সংক্রমণ হতে পারে কিংবা প্রদাহের ফলে পুঁজ বের হতে পারে।
কিভাবে হয়ঃ
রক্তে যখন ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন ধীরে ধীরে এই বেড়ে যাওয়া এসিড অল্প অল্প করে শরীরের বিভিন্ন খাঁজে বা পকেটগুলোয় জমা হতে থাকে এবং ক্রিস্টালের আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে একদিন হঠাৎ করে জয়েন্ট ফুলে উঠে, লাল হয়ে যায় এবং তীব্র ব্যথা হয়। ইউরিক এসিডের ক্রিস্টালগুলো দেখতে সুঁচের মতো হওয়ায় তীব্র যন্ত্রণা হয়ে থাকে। আবার শরীরের রক্তে এই ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলেই যে সবসময় গেঁটে বাত হবে এমনটি নয়। কারণ- এই ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে গিয়ে যদি দেহের কিডনিতে জমা হলে তা থেকে হতে পারে কিডনিতে পাথর হতে পারে, আবার ত্বকের নিচে জমা হলে তা থেকেও এ রকম বাত হতে পারে।
গাউট বা গেঁটে বাতের কারণসমূহঃ
গাউট হওয়ার ঝুঁকি ও কারণ সমুহ দুটি ভিন্ন জিনিস যেখানে উপরে উল্ল্যেখিত ঝুঁকি সমুহ থাকলে গাউট হবার সম্ভাবনা বেড়ে যার কিন্ত নিম্নোক্ত কারণসমূহ সরাসরি গাউট সৃষ্টিতে দায়ী। গাউটে যেমনকি বলা হয়েছে রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নিম্নোক্ত কারণে রক্তে ইউরিক এসিড অতিরিক্ত আসে বা তৈরি হয় শরীরে অথবা কিডনি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করতে পারে না যার ফলে ইউরিক এসিড জমা হতে থাকে। এর কারণসমূহ নিম্নরূপ- ১। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় খাসির মাংসসহ লাল জাতীয় মাংস, শুকনো শিম জাতীয় দানা, মটরশুঁটি, মাশরুম, মাছের ডিম, কলিজা, কচু, লালশাক, পুঁইশাক বা অ্যালকোহলের পরিমাণ বেশি থাকলে রক্তে ইউরিক এসিড বাড়তে পারে। ২। বংশানুক্রম বা জেনেটিক কারণে হতে পারে। ৩। শরীর হালকা বা মেদহীন রাখার জন্য কঠোর ডায়েটিং করেন তাদের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণেও গেঁটে বাত হতে পারে। ৪। দীর্ঘদিন উপোস থাকার কারণে শরীরে রক্তের মধ্যে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। ৫। কিডনির সমস্যার কারণে শরীর থেকে ইউরিক এসিড যখন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে না, তখন গেঁটে বাত সৃষ্টি হয়।
রোগ নির্ণয় :
রোগের ইতিহাস জেনে, রোগীকে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করে এবং কিছু ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়। ল্যাবরেটরি টেস্টের মধ্যে কিছু রুটিন রক্ত পরীক্ষা, রক্তে ইউরিক এসিডের লেভেল দেখা এবং সাইনোভিয়াল ফ্লুইড অ্যানালাইসিস করে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল চিহ্নিত করা খুব জরুরি। এ ছাড়া আক্রান্ত জয়েন্টের এক্স-রে করাও দরকার।
চিকিৎসাঃ
বাত সৃষ্টিকারী কারণ দমন করাই মূল লক্ষ্য। খাদ্য গ্রহণসহ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যথা নিরাময় ও রোগ দমনের জন্য ওষুধ সেবন করা অপরিহার্য। কিন্ত নিচে উল্ল্যেখিত যেকোন ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত সেবন করা যাবে না। চিকিৎসা সুবিধার জন্য নিম্নলিখিত তিন ভাগে চিকিৎসার বর্ণনা করা হল-
১। হঠাৎ আক্রান্ত বাত (Acute Attack)
ক) ক্রান্ত জয়েন্টে বরফ লাগাতে হবে এবং বিশ্রামে রাখতে হবে।
খ) দ্রুত কার্যক্ষম ননস্টেরয়েডাল এন্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ যেমন : ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen), ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac), ইনডোমেথাসিন (Indomethacin) ব্যথা নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
গ) ওরাল কলচিসিন (Oral colchicines) ও ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে।
ঘ) তীব্র ব্যথার সময় আক্রান্ত জয়েন্ট থেকে সিরিঞ্জের সাহায্যে তরল পদার্থ বের করে আনলে রোগী সুস্থ বোধ করেন। তরল পদার্থ বের করার পাশাপাশি ওই জয়েন্টে ইনজেকশনের সাহায্যে স্টেরয়েডও (steroid) দেয়া হয়।
২। দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা (Chronic Treatment)
রোগীকে শরীর থেকে মেদ কমানোর পাশাপাশি অ্যালকোহল গ্রহণে সতর্কতার কথা বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় ইউরিক এসিডের মাত্রা কম রাখার জন্য ড্রাগ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও রিহ্যাবিলিটেশান ও ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমেও এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন কারণে রক্তে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড তৈরি হয়। যেমন-
বয়স বেশি হওয়া।
বংশগত এনজাইমের ত্রুটি, হাইপার প্যারা থাইরয়েডিজম।
রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যাওয়াজনিত অস্বাভাবিকতা
দেহের অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ।
প্রচুর লাল মাংস খাওয়া।
রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত অসুখ।
দীর্ঘ দিন ধরে অ্যাসপিরিন বা ডাইইরেটিকস ওষুধ গ্রহণ।
অতিরিক্ত মদপান, সোরিয়াসিস রোগ, সিসার বিষক্রিয়া ও অতিরিক্ত ব্যায়াম এর কারণে হতে পারে।
হঠাত্ করে বেশি পরিমাণে খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দেয়া বা অভুক্ত থাকা।
রক্তের ইউরিক এসিড কমাতে কি ধরণের খাবার বর্জন করতে হবে
রক্তের ইউরিক এসিড কমাতে পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন-
বিভিন্ন ধরণের ডাল বিশেষ করে মসুর ডাল ও মটর ডাল।
শিম, শিমের বিচি, বরবটি, মটরশুঁটি, কড়াইশুঁটি ইত্যাদি।
পুঁইশাক, পালং শাক, অ্যাসপ্যারাগাস, ফুলকপি, মাশরুম, ইস্ট ইত্যাদি।
গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, হরিণের মাংস, সব ধরণের হাঁসের মাংস যেমন- রাজহাঁস, জংলি হাঁস ও পাতিহাঁস; বাছুরের মাংস, শূকরের মাংস, খরগোসের মাংস, বড় পাখির বা তুর্কি মোরগের মাংস, কবুতরের মাংস, তিতির পাখির মাংস ইত্যাদি।
মগজ, কলিজা, বৃক্ক, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, জিহ্বা ইত্যাদি।
বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও মাছের ডিম।
ঝিনুক, কাঁকড়া, চিংড়ি, শামুক ইত্যাদি।
মাংসের ঝোল, মুরগির স্যুপ, মাংস ও তরকারির স্যুপ ইত্যাদি।
Realted Tag:
Marketa Vondrousova Wimbledon Shoe Brush Body Pillows Pillow Cubes Purple Pillow Sanitation Towel Superfeet Insole The Woman king Showtimes Top Women Boxers in the World Electric toothbrush charger Artificial Grass for Dogs Flare Leggings 4K Laptops