যেমন হওয়া উচিৎ বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক

একটি শিশু জন্ম নেয় পরিবারেই আর তাই পরিবারই হয়ে ওঠে শিশুটির সবচেয়ে আপন ভুবন। প্রথম শিক্ষা লাভের জায়গা। পরিবারের সদস্যরাই হয়ে ওঠে শিশুর সবচেয়ে আপনজন। পাশাপাশি বলা যায় শিশুর প্রথম ও সবচেয়ে বড় শিক্ষকও হন শিশুটির বাবা-মা। শুভ্র-সুন্দর ও নরম হয় শিশুদের মন। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই শিশুরা খুব অণুকরণ প্রিয়ও হয়ে থাকে। সেইসাথে প্রিয়জনদের কাছ থেকে শেখা বিষয়গুলো তারা মনেও রাখে বেশি। এজন্য বাবা-মাকেই সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে তাদের শিশুটির প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে।

আগের দিনে আদর্শ সন্তান বলে একটা কথা প্রায়ই শোনা যেত। কিন্তু আদর্শ বাবা-মা বলতে তেমন কিছুই শোনা যায়নি। তবে এই কথাটা অনেকের কাছে একটু অন্যরকম মনে হলেও কথাটার গভীরতা অনেক বেশি, কেননা সন্তানকে আদর্শবান হিসেবে দেখতে চাইলে আগে বাবা-মাকে নিজেদের আদর্শগুলো প্রদর্শন করতে হবে সন্তানের সামনে।

বাবা-মায়ের সাথে কেমন সম্পর্ক চাই সবাই?

এমন প্রশ্নের ভিত্তিতে পাওয়া বেশিরভাগ কিশোর কিশোরীর মতামত থেকে নিচের বিষয়গুলো উঠে এসেছে

বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক :
বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক হওয়া উচিৎ বন্ধুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি মানুষ তার বন্ধুর সাথে প্রায় সব কথা শেয়ার করে, এজন্য বাবা-মা কে সন্তানের সাথে এমনভাবে মিশতে হবে যেন সন্তান বাবা-মা কে বন্ধু ভাবতে পারে।

শ্রদ্ধাবোধপূর্ণ সম্পর্ক :

তুমি কারো থেকে শ্রদ্ধা আশা করলে তার আগেই তা প্রদর্শন কর! এরকম একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে আগে থেকেই। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের এরকম একটা সম্পর্ক থাকা জরুরি। কেননা শ্রদ্ধাবোধহীন সম্পর্কে দ্রুত ফাটল ধরে। তাছাড়া মানুষ বেশি বিশ্বাস করে তাকেই, যে তার শ্রদ্ধার পাত্র হয়। অনেক সময় ভয় থেকে শিশুরা বাবা-মাকে সত্যি কথা বলতে পারেনা। কিন্তু শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সেখানে ভয় থাকেনা সম্মান থাকে একে অপরের জন্য এবং সন্তানের সাথে একরম একটি সম্পর্ক তৈরিতে বাবা-মা শিশুকে সাহায্য করতে পারে, আর তা হবে শিশুকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে। শিশুর কথা মনযোগ দিয়ে শুনে তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করতে হবে পাশাপাশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও দিতে হবে শিশুদের। এই আচরণ শিশুর ভবিষ্যত ব্যক্তিত্ব গঠনেও সহায়ক।

অনেক পরিবারেই দেখা যায় পরিবারে বড় অথবা ছোট সন্তানটিকে বেশি স্নেহ প্রদান করা হয় আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের মেয়ে শিশুটির তুলনায় ছেলে শিশুটির প্রতি দেওয়া হয় অধিক নজর।এক্ষেত্রে যার প্রতি নজর কম দেওযা হচ্ছে তার মনে আঘাত লাগতে পারে। এজন্য বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের এধরনের আচরণ থেকে বিরত থেকে সব সন্তানের প্রতি সমান নজর দেওয়া উচিৎ।

ভালো শ্রোতা ও উপদেশদাতা :
যে মনযোগ দিয়ে কথা শোনে বা বোঝে তার কাছেই অধিকাংশ মানুষ মনের কথা শেয়ার করে । সুতরাং সন্তানের কথা মন দিয়ে শোনার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। উপদেশ দেবার সময় চেষ্টা করতে হবে যেন তা বোধগম্য ও সঠিক হয়।

একসাথে সময় ব্যয় করা :
সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে বাবা-মাকে তাতে করে উভয়ের সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়বে,তৈরি হবে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক।

ভুলগুলো সঠিকভাবে শোধরানো :
অনেক সময় সন্তানদের প্রহার করেন বাবা-মায়েরা, যা সন্তানদের মনে খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। সন্তানের ভুলের জন্যে তাদের প্রহার না করে সঠিকভাবে বুঝিয়ে তাদের ভুলগুলো শোধরাতে হবে।

বিশ্বাস রাখতে হবে সন্তানের প্রতি :
বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিশ্বাস পেলে সন্তানদের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এছাড়া বাবা-মায়ের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়াটাও খুব প্রয়োজনীয়, তবে সেক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।