কিটো ডায়েট কি? আজই বন্ধ করুন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ “কিটো ডায়েট“

যান্ত্রিক এই সভ্যতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ কায়িক শ্রম না করার কারণে মুটিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই । আবার খেলার মাঠের অভাব কিংবা ব্যায়াম করার মতো মানসিকতা না থাকায় ও স্থূলকায় হচ্ছেন অনেক মানুষ । তাই যারা কিছুটা স্বাস্থ্য সচেতন , তারা মুটিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে ইদানীং ঝুকছেন ইউটিউবে দেখানো “কিটো ডায়েট” এর দিকে । অথচ সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক এই ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানলে আপনি রীতিমতো শিউরে উঠবেন !

“লো কার্ব ডায়েট” নামে পরিচিত এই ডায়েটের দিকে ঝুঁকছেন বর্তমানে অনেকেই । ডায়েট সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছাড়াই ইন্টারনেট, ইউটিউব দেখে অল্প সময়ে ওজন কমাতে কিটো ডায়েট করছেন, কিন্তু এটি এমন এক ধরনের ডায়েট, যা পরীক্ষামূলকভাবে ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে নিজের ওপর প্রয়োগ করলে হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর । তো , আসুন জেনে নিই এর ক্ষতিকর দিকগুলোঃ

পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট ডা. মৌসুমী আফরিন বলেন, “স্বাভাবিক ডায়েটে আমরা আমাদের দৈনিক শক্তির চাহিদার ৫৫-৬০ শতাংশ পাই কার্বোহাইড্রেট থেকে, ১৫-২০ শতাংশ পাই প্রোটিন এবং ২৫-৩০ শতাংশ পাই ফ্যাট থেকে। কিন্তু একজন ব্যক্তি যখন কিটো ডায়েট করেন, তখন তার খাদ্যের ৭৫ শতাংশ নেন ফ্যাট-চর্বি থেকে, ২০ শতাংশ প্রোটিন-আমিষ এবং মাত্র ৫ শতাংশ নেন কার্বোহাইডেট-শর্করা থেকে যা রীতিমতো প্রকৃতি বিরুদ্ধ ”।

তিনি আর বলেন, “কিটো ডায়েট আসলে সর্বসাকল্যে সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কোনো ডায়েট নয়। শুধুমাত্র মৃগী রোগীদের সুস্থতার কথা মাথায় রেখে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানকে বাদ দিয়ে হাই ফ্যাট, হাই প্রোটিন এবং অল্প কার্বোহাইড্রেড দিয়ে এই খাদ্যতালিকাকে সাজানো হয়েছিলো যা বর্তমানে নিষিদ্ধ। কারণ সাইড ইফেক্ট হিসেবে অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পেত সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতাও দেখা দিত।

আমাদের মস্তিষ্কের প্রধান খাদ্য হচ্ছে— শর্করা বা গ্লুকোজ, যা আমাদের সারা দিনের কাজের এনার্জি দেয়। এ শর্করা গ্রহণ না করে যখন আপনি কিটো ডায়েটের নামে চর্বিকে মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে যাচ্ছেন, তখন শর্করার প্রয়োজন মেটাতে, অতিরিক্ত চর্বিকে পুড়িয়ে শরীরের স্বাভাবিক মেটাবলিজমের বিরুদ্ধে কাজ করে হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে আপনার শরীরের জমে থাকা চর্বিকে ভেঙে ওজনকে কমিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু একটি বিশেষ সময় পার করার পর ফ্যাট বার্ন হওয়ার ফলে কিটন বডি অতিরিক্ত তৈরি হওয়াতে রক্তে প্রাথমিকভাবে কিটোসিস এবং পরবর্তী সময়ে কিটোএসিডোসিস দেখা দেয়, যা কিনা রক্তের সাধারণ পিএইচ লেভেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিটো ডায়েট শুরুর প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ ঝুঁকি কম হলেও দীর্ঘমেয়াদি কিটো পালনে মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, শরীর কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা, বমি বমি ভাবসহ কাজে অমনোযোগী হওয়া, সব কিছু ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে বা হঠাৎ রেগে যাওয়া, সারা দিন পানির পিপাসা পাওয়াসহ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। না বুঝে বেশি সময়ের জন্য এ ডায়েট অনুসরণ করায় অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণের কারণে আপনার রক্তের কোলেস্টেরল, এলডিএল, টিজিকে বাড়িয়ে স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে”।

এই কিটো ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকায় এবং অধিক চর্বি ও প্রোটিন গ্রহণের কারণে একদিকে ডায়রিয়া, অপরদিকে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত তাদের লিভারকে আরও দুর্বল করার পাশাপাশি পিত্তথলিতে পাথর, হজম শক্তি কমে যাওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। পাশাপাশি যারা গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী মা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স আছে, আর্থ্র্রাইটিসে ভুগছেন এমন কেউ যদি এ ডায়েট ফলো করেন, তিনি অত্যন্ত ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন , তা নিশ্চিত করেই বলা যায় ।

যারা কিডনী রোগী , তাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিনের বেশি খেতে নিষেধ করা হয়। সেই প্রোটিন জাতীয় খাবার যখন একজন সুস্থ ব্যক্তি শরীরের চাহিদার চেয়ে বেশি নিচ্ছেন, তখন তার কিডনিতে চাপ পড়ে যায়। দীর্ঘ সময় এ চাপ নিতে না পেরে কিডনিতে পাথর হওয়াসহ বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে । না বুঝে এ ডায়েট শুরু করলে অনেক মেয়ের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় এবং পরবর্তী সময়ে রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমসহ বাচ্চা ধারণক্ষমতাও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। নানারকম পুষ্টি উপাদানের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে।

পরিণতি না জেনেই শর্করা কমানোর কারণে অনেক ডায়াবেটিস রোগীই তাৎক্ষণিক উপকার পেয়ে ডায়াবেটিসের ওষুধ বন্ধ করে দেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর শরীরের স্বাভাবিক মেটাবলিজমে ব্যাঘাত ঘটার কারণে রোগীকে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে কিটো অ্যাসিডোসিস নিয়ে আইসিইউ পর্যন্ত যেতে হয়।

সবচেয়ে বড় কথা, কিটো ডায়েটের ফলে প্রাথমিকভাবে ওজন কমে গেলেও পরবর্তী সময়ে এ ডায়েট ছেড়ে দিলে তার থেকে আরও বেশি ওজন বাড়ে। তাই শুধু ফেসবুক আর ইউটিউবের কয়েকটি ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া কিটো ডায়েটকে অনুসরণ না করে আপনার শরীরে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পাশাপাশি হাঁটা এবং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপনার অন্তত জীবননাশের সম্ভাবনা কম থাকবে ।

Realted Tag:

Marketa Vondrousova Wimbledon Shoe Brush Body Pillows Pillow Cubes Purple Pillow Sanitation Towel Superfeet Insole The Woman king Showtimes Top Women Boxers in the World Electric toothbrush charger Artificial Grass for Dogs Flare Leggings 4K Laptops