ঘুমের ঘোরে প্রায়ই মনে হচ্ছে খাট থেকে পড়ে যাচ্ছেন? জেনে নিন কারন ও প্রতিকার

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাত পর্যন্ত সবারই কাটে নানা ব্যস্ততায়। দিনশেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে শরীর চায় একটু বিশ্রাম। দেখা যায়, একটু বিশ্রাম নিতে অনেকেই খানিক ঘুমিয়ে নেন। এই অল্প সময়টুকুতে অনেকেই ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি অনুভব করেন।

অর্থাৎ আপনি যখন বেশ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হঠাৎ তখনই বৈদুত্যিক শকের মতো ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে শরীর। এই সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। শুধু ঝাঁকুনি নয়, অনেকের আবার মনে হয় যে শূন্যে কিংবা খাট থেকে পড়ে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কেন এমন হয়?

চিকিৎসকরা মনে করেন, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ঘুমের মধ্যে এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন।

ঘুমের মধ্যে এই হঠাৎ চমকে বা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে হিপনিক জার্ক। এর আরো একটি নাম আছে। একে মায়োক্লোনিক জার্ক বা স্লিপ সুইচও বলা হয়ে থাকে।

মূলত তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় হিপনিক জার্ক ঘটে থাকে। মানুষ যখন সবে ঘুমাতে শুরু করেন, অর্থাৎ ঘুমের ঘোর তৈরি হয় যখন সেই সময় স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। কিন্তু মস্তিষ্কে থাকা সেরিব্রাম কর্টেক্স সেটা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে না। মস্তিষ্কের সঙ্গে নিউরোট্রান্সমিটার এর অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে হিপনিক জার্ক হয়ে থাকে।

এছাড়াও বিভিন্ন কারণে এমন হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই কারণগুলো-

** অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে।

** ক্যাফিন বা নিকোটিন সমৃদ্ধ চা, কফি বেশি খেলে।

** ম্যাগনেশিয়াম, আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় কিছু উপাদানের শরীরে ঘাটতি থাকলে।

অপর্যাপ্ত ঘুম যেসব কঠিন রোগের কারণঃ

প্রত্যেক মানুষেরই বয়সভেদে নির্দিষ্ট অনুপাতে ঘুম প্রয়োজন। অনেকেরই ধারণা দিনে আট ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট, তবে তা কিন্তু প্রত্যেকের জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুমের পরিমাণও ভিন্ন। জেনে নিন বয়সভেদে ঠিক কতটুকু ঘুম প্রয়োজন-

০-৩ মাস : ১৪-১৭ ঘণ্টা

৪-১১ মাস : ১২-১৫ ঘণ্টা

১-২ বছর : ১১-১৪ ঘণ্টা

৩-৫ বছর : ১০-১৩ ঘণ্টা

৬-১৩ বছর : ৯-১১ ঘণ্টা

১৪-১৭ বছর : ৮-১০ ঘণ্টা

১৮-৬৪ বছর : ৭-৯ ঘণ্টা

৬৫+ বছর : ৭-৮ ঘণ্টা

ঘুম কম হলে তার প্রভাব পড়ে শরীরে। এজন্য অনেকের মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে। এমনকি অনিদ্রার ফলে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে-

চিন্তাশক্তি কমে যায়

প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুম কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। আর এ কারণেই মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে। অনিদ্রার ফলে সারাদিন ক্লান্তিভাব, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও অহেতুক উদ্বেগের জন্য দায়ী।

মনোযোগের কমায়

কম ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তিতে দুইভাবে প্রভাব ফেলে। প্রথমত, কোনো কাজে মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে যায় ও শেখার চেষ্টা কমে যায়। দ্বিতীয়ত, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে স্মৃতি একীভূতকরণে। তাই কম ঘুমের ফলে বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতি মস্তিষ্ক থেকে মুছে যায়।

ত্বকের লাবণ্যতা কমে

ধারাবাহিকভাবে ঘুমের অভাব হলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, চেহারায় ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ। কারণ ঘুমের সময় শরীর তার মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে নতুন কোষের সংস্থাপন করে। সঠিক পরিমাণ ঘুম শরীরের ৬০ শতাংশ ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে। এছাড়াও কম ঘুম শরীরে গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণও কমিয়ে দেয় ও শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে।

ওজন বাড়ার কারণ

বেশি ঘুমালে ওজন বাড়ে, তা সবার জানা। তাই অনেকেরই ধারণা হয়ত কম ঘুমালে নিশ্চয়ই ওজন কমে? কিন্তু সঠিক উত্তর ঠিক এর উল্টো। ঘুমের অভাব আমাদের ক্ষুধার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণা মতে, যারা দিনে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমায় তাদের থেকে যারা দিনে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমায় তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি।

দুশ্চিন্তার কারণ

অপর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় উঠে এসেছে, বেশিরভাগ হতাশাগ্রস্থ মানুষ ছয় ঘণ্টার কম ঘুমায়। আর ডিপ্রেশন থেকেই ‘ইনসোমেনিয়া’ বা অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়।

প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়

একটানা ঘুমের অভাব দেহে হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়। অনিয়মিত ঘুম পুরুষ দেহে টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণ কমায়, যা প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। আর নারী দেহে ঘুমের অপ্রতুলতা শরীরের জৈবিক ছন্দ ব্যাহত করে। হরমোন ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায় ও যৌন তাড়না কমায়।

হৃদরোগের কারণ

স্বল্প ঘুমের অর্থ হচ্ছে শরীর তার পর্যাপ্ত বিশ্রামটুকু পাচ্ছে না। বিশ্রামহীন শরীরকে দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম রাখতে প্রাকৃতিকভাবেই বিশেষ কিছু রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটে। এতে করে সাময়িকভাবে হৃদকম্পন ও ব্লাড প্রেসার কমে যায়। তবে নিয়মিত এমন ঘটতে থাকলে হৃদকম্পন ও ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিস ও হার্টের বিভিন্ন রোগের কারণ।

ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়

অপর্যাপ্ত ঘুম ও ক্যান্সারের মধ্যে সূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে স্তন, প্রস্টেট ও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের সঙ্গে। মূলত ঘুম স্বল্পতা যে কোনো ক্যান্সারের সম্ভাবনাই বাড়িয়ে দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও আরোগ্য লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ঘুমের সময় শরীরে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা কোষক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে

তন্দ্রাভাবের কারণেই বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গাড়ি চালানোর সময় অনেক ড্রাইভারই এই তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন! আর এ কারণেই তারা দুর্ঘটনার সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়ে থাকেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর ২৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ঘুমের ব্যাধিতে আক্রান্ত। কারো ক্ষেত্রে তা বড় সমস্যার কারণ হলেও অন্যরা বিষয়টি সম্পূর্ণ অবহেলা করে। হয়ত আমাদের শরীরে বাসা বাধা বড় রোগটির নেপথ্যেও যে অপর্যাপ্ত ঘুমই দায়ী তা অনেকেরই অজানা।

Realted Tag:

Marketa Vondrousova Wimbledon Shoe Brush Body Pillows Pillow Cubes Purple Pillow Sanitation Towel Superfeet Insole The Woman king Showtimes Top Women Boxers in the World Electric toothbrush charger Artificial Grass for Dogs Flare Leggings 4K Laptops