গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার মধ্যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি হলো এন্ডোমেট্রিওসিস। এ রোগটি নারীদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মানের অবনতি ঘটায় এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। এন্ডোমেট্রিওসিস নামে না চিনলেও ‘চকলেট সিস্ট’ নামে এ রোগটি অনেকের কাছেই বেশ পরিচিত।
কারণ কী
এই রোগের কারণ মূলত অজানা। তবে কিছু থিওরিটিক্যাল ব্যাখ্যার মাধ্যমে এর কারণ চিহ্নিত করা হয়। যেমন মাসিকের রক্ত যদি পেছনের দিকে গিয়ে ডিম্বনালির মধ্য দিয়ে পেটের ভেতরে যায়, তাহলে এ রোগটি হতে পারে। এ ছাড়া জেনেটিক বা বংশগত কারণকেও এই রোগের জন্য দায়ী করা হয়।
কীভাবে হয়
জরায়ুর তিনটি স্তরের মধ্যে সবচেয়ে ভেতরের স্তরটির নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ জরায়ুর বাইরে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে এন্ডোমেট্রিওসিস হয়।
জরায়ুর বাইরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে গ্রথিত হওয়া এন্ডোমেট্রিয়াল কোষের ওপরও একই সঙ্গে স্ত্রী হরমোনের প্রভাব পড়ে। ফলে জরায়ুর ভেতরের স্তরের মতো একই ধরনের পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।
জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামের স্তরটি মাসিকের সময় বেরিয়ে গেলেও অন্যান্য জায়গার পরিবর্তিত স্তরগুলো বেরোতে পারে না। সেগুলো সেখানে থেকে গিয়ে রক্ত ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘন ও আঠালো হয়ে সিস্ট তৈরি করে অথবা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে গ্রথিত অবস্থায় থেকে যায়। ফলে ঋতুচক্রের সঙ্গে সঙ্গে এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণগুলো আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
কোথায় হয়ে থাকে
ডিম্বাশয় ওভারি (চকলেট সিস্ট)
ডিম্বথলি
মলাশয়
পেরিটোনিয়াম ও লিগামেন্ট
ওমেন্টাম ও তন্ত্রে
মূত্রথলি
মূত্রনালি
জরায়ুর মাঝখানের স্তর
আগের কোনো অপারেশনের ক্ষত বা সেলাইয়ের জায়গায়
ফুসফুস, কিডনি, নাভিসহ অন্যান্য দূরবর্তী জায়গাতেও
উপসর্গ
মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, চাকা চাকা রক্ত পড়া
ঘন ঘন মাসিক হওয়া
মাসিকের সময় প্রস্রাব ও পায়খানা করতে ব্যথা হওয়া
মাসিকের সময় ছাড়াও মাসজুড়ে তলপেটে ব্যথা থাকা
সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া
বন্ধ্যত্ব
কোনো কোনো ক্ষেত্রে, এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকিৎসকেরা এই রোগ শনাক্ত করে থাকেন।
কাদের বেশি হয়
সাধারণত একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ বছরের নারীরা এই রোগে বেশি ভোগেন।
তুলনামূলকভাবে উচ্চবিত্তদের এন্ডোমেট্রিওসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
শতকরা প্রায় ৫০ থেকে ৭০ ভাগ বন্ধ্যা নারীর মধ্যে এই রোগের উপস্থিতি দেখা যায়
রোগ নির্ণয়
ভালোভাবে রোগীর ইতিহাস জেনে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সহজে এই রোগ শনাক্ত করা যায়।
আলট্রাসনোগ্রাফির মধ্যে ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফি সহায়ক হতে পারে।
ওভারিতে সিস্ট থাকলে রক্তের সিএ-১২৫ পরীক্ষাটি করা উচিত।
ল্যাপারোস্কপি, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করেও এই রোগ নির্ণয় করা যায়।
কেউ বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগে থাকলে রক্তের এএমএইচ পরীক্ষাটি করা বাঞ্ছনীয়।
চিকিৎসা
এন্ডোমেট্রিওসিস নিরাময়যোগ্য নয়। রোগটি যেমন দীর্ঘমেয়াদি, তার চিকিৎসাও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। অনেক সময় চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এ জন্য রোগীরা হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এই রোগের চিকিৎসার শুরুতেই রোগীকে আশ্বস্ত করা ও কাউন্সেলিং করা অত্যন্ত জরুরি।
মাসিকের সময় ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে।
রক্তপাত বেশি হলে অ্যান্টিফিব্রিনোলাইটিক বা ট্র্যানেক্সামিক অ্যাসিডজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
একনাগাড়ে কয়েক মাস ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন হরমোনসমৃদ্ধ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।
শুধু প্রজেস্টেরন বা প্রজেস্টোজেন হরমোন দিয়েও চিকিৎসা করা হয়।
এ ছাড়া গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন অ্যানালগ-জাতীয় ইনজেকশন মাসে একবার করে মোট তিন থেকে ছয় মাস দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
ওষুধের সাহায্যে অবস্থার উন্নতি না হলে অপারেশন, যেমন ল্যাপারোস্কোপি, ল্যাপারোটমি করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি এই রোগের সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ফলোআপ করলে অনেকটা ভালো থাকা যায় এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনের মানও
উন্নত হয়।
লেখক: প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
Realted Tag:
Marketa Vondrousova Wimbledon Shoe Brush Body Pillows Pillow Cubes Purple Pillow Sanitation Towel Superfeet Insole The Woman king Showtimes Top Women Boxers in the World Electric toothbrush charger Artificial Grass for Dogs Flare Leggings 4K Laptops