বিয়ের আগের এক মাস রুপচর্চার এই রুটিন মেনে চলুন

বিয়ে ঠিক! শারীরিক-মানসিক অনুভূতিতে পরিবর্তন দেখা দেয় এই সময়। বিয়ের এক মাস আগে থেকেই কিন্তু শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়। এই সময়ে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাও যেমন করতে হয়, আবার বিউটি রুটিনেও বিশেষ টাচ দিয়ে থাকেন অনেকে।

কারণ, এই একমাসে নিজের এতটাই যত্ন নেয়া উচিত, যাতে বিয়ের দিন আপনাকে দেখে কেউ চোখ ফেরাতে না পারে। কনের জেল্লা দেখে তাক লেগে যায় সবার।
ঠিক এভাবেই নিজের যত্ন করা উচিত। এই সময় অবলম্বণে জেনে নিন উপায়।

চুলের যত্নও কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। এই একমাস চুলের যত্ন নিন। প্রতি সপ্তাহে ঘরোয়া হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করুন। চুলের জেল্লাও ফিরবে। নরম হবে চুল। চুল পড়া কমে যাবে। এবার জেনে নিন আপনার লিস্টে কোন কোন হেয়ার প্যাক থাকবে। কোন কোন হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করবেন? হবু কনেরা অনেক ঘরোয়া হেয়ার মাস্কই ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের হেয়ার মাস্ক বেশ ভালো। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক চুলের যত্নে ব্যবহার করা যেতেই পারে। আপনি বাড়িতেই বানিয়ে নিন আপনার পছন্দের হেয়ার মাস্ক। তবে চুলের ধরন অনুযায়ী এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করাই ভালো। রইল সেই তালিকা…

অ্যালোভেরা এবং ভিটামিন ই

>>আপনার চুলের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। জেল্লা যোগ করার জন্য আপনার হেয়ার রুটিনেও কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একবার এই হেয়ার প্যাক আপনাকে ব্যবহার করতেই হবে। তবে অ্যালোভেরার এই হেয়ার প্যাক আপনি সপ্তাহে তিন দিনও ব্যবহার করতে পারেন।

>>একটি পাত্রে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল নিন। তার সঙ্গে মিশিয়ে দিন ভিটামিন ই। এই ভিটামিনের ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায়। একটি ক্যাপসুল থেকে এক্সট্র্যাক্ট বের করে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। দুই উপাদান ভালো করে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। আঙুলে করে স্ক্যাল্পে ও চুলের গোড়ায় ভালো করে মালিশ করে নিন এই মিশ্রণ। চুলেও লাগিয়ে নিন। ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

হেনার হেয়ার মাস্ক
বিয়ের আগে অনেকেই চুলে রং করাতে চান। তারা কিন্তু হেনার মতো প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে চুল রং করাতে পারেন। হেনা আপনার চুলে যোগ করে একটি প্রাকৃতিক রং। যা দেখতেও ভালো লাগে। চুলও থাকে নরম। জেল্লা হয় দেখার মতো। যদি আপনি হেনা ব্যবহার করে চুল রং করতে চান, তবে হেয়ার মাস্ক লাগানোর আগের রাতে আপনাকে হেনা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। রং করতে না চাইলে এই স্টেপটি আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন।

একটি পাত্রে পরিমাণ মতো হেনা পাউডার নিয়ে নিন। তার সঙ্গে পরিমাণ মতো টক দই মিশিয়ে দিন। একটি ডিমের সাদা অংশও মেশাতে পারেন। এই প্রত্যেকটি উপাদান মিশিয়ে আপনি একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। আপনার হেয়ার মাস্ক তৈরি। তা চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। হেয়ার মাস্ক লাগানোর পরে এক-দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

ডিমের হেয়ার মাস্ক
ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। বায়োটিন ও বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন চুলের জন্য খুবই ভালো। এসব উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে। সহজেই চুল পড়ে না। ডার্মাটোলজি অ্যান্ড থেরাপি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রেও এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এই হেয়ার প্যাক বানানোর জন্যে আপনার প্রয়োজন ডিম এবং নারকেল তেল। এই নারকেল তেলে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এটি আপনার চুল কন্ডিশনিং করে। ফলে চুল শুষ্ক হয়ে ভেঙে যায় না। নরম থাকে। পাত্রে গোটা ডিম নিন। এক টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে দিন। দুটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ফেটিয়ে নিন। হেয়ার প্যাক তৈরি। এই হেয়ার প্যাক স্ক্যাল্প ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

পেঁয়াজের হেয়ার মাস্ক
পেঁয়াজের রসে সালফার পাওয়া যায়। এটি চুল ঘন করতে সাহায্য করে। চুল পড়া কমায়। চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের রস কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬-ও আছে। ভিটামিন সি ও বি-৬ কিন্তু আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এই হেয়ার প্যাক তৈরি করার জন্য আপনার প্রয়োজন পেঁয়াজের রস এবং ক্যাস্টর অয়েল। এই দুই উপাদান মিশিয়ে তৈরি করতে হবে হেয়ার প্যাক। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ক্যাস্টর অয়েল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এই তেলে। এই উপাদান রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। চুলে গোড়াকে মজবুত করে। আর্দ্রতা যোগ করে। ভিটামিন ই চুলের জন্য খুবই ভালো। স্ক্যাল্পের পিএইচ-এর ভারসাম্য বজায় রাখে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের রস এবং ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে একটি সুন্দর হেয়ার প্যাক বানিয়ে নিন। তারপর সেই প্যাক চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। ১ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার এই হেয়ার প্যাক লাগাতে পারেন।

এক মাস এর মধ্য়ে যেকোন একটি হেয়ার প্যাকও নিয়মিত লাগাতে পারলে উপকার পাবেন হবু কনেরা। চুলের জেল্লা হবে দেখার মতোই। স্ক্যাল্পে কোনো সমস্যা থাকলে বা চুলের কোনও চিকিৎসা চললে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই কোনও ঘরোয়া হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করুন।