



শিশুরা যাতে পড়াশোনায় মনোযোগী হয় সে জন্য বাবা-মায়ের চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় সন্তান ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকে। আর বাবা-মা মনে করেন সন্তান খুব করে পড়ছে। আসলে তা নয়। এমন অনেক শিশুই আছে যারা সারাদিন পড়লেও পড়া মনে রাখতে পারে না। পরবর্তীতে যা মা-বাবার বড় আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।




এমনটা বার বার হলে স্বাভাবিকভাবেই রেগে যাবেন অনেক অভিভাবকই। কিন্তু এর জন্য শিশুকে বকা না দিয়ে তাদের সমস্যা বুঝুন। অন্যমনস্কতা, দৈনন্দিন জীবনে কোনো সমস্যা বা ডিসটার্বেন্স তাদের পড়ায় মনোনিবেশ করতে দিচ্ছে না। আবার শিশুদের চঞ্চল স্বভাব তো রয়েছেই। অন্য দিকে অনেক সময় স্মৃতিশক্তির অভাবের কারণে শিশুরা পড়া মনে রাখতে পারছে না। শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই পারিপার্শ্বিক বহু বিষয়েই ভুলে বসে আছে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের স্মৃতিশক্তি মজবুত করার জন্য তাদের খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার যোগ করতে পারেন। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হবে এবং তাদের স্মৃতিশক্তিও মজবুত হবে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক কিছু উপকারী খাবার সম্পর্কে-




** প্রতিদিন সকালে শিশুকে খাবারের সঙ্গে এক চামচ ঘি দেওয়া উচিত। এই ঘি বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি মজবুত করতে সাহায্য করে।
** ডিমকে প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস মনে করা হয়। প্রতিদিন ডিম খেলে বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্ভব হয়। ডিমে উপস্থিত কোলিন মস্তিষ্কের কার্যকরিতা বৃদ্ধি করে।
** ওটস খাওয়ালে শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। ওটসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, জিঙ্ক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। এতে উপস্থিত ফাইবার শিশুর শরীরে শক্তি জোগায়।




** মস্তিষ্কের কার্যকরিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আভাকাডো। এতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট উপস্থিত, যা মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এতে উপস্থিত ওলিক অ্যাসিড মাইলিনকে নিরাপত্তা প্রদান করে। মাইলিনের সাহায্যে মস্তিষ্ক ২০০ মাইল প্রতিঘণ্টা বেগে সূচনা পৌঁছে দিতে পারে। এই ফলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে, যা বাচ্চাদের উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
** একটি গবেষণা অনুযায়ী সবুজ শাকসবজি স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা দূর করে। সবুজ শাকপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, প্রোটিন, ফোলেট ও বিটা ক্যারোটিন উপস্থিত থাকে, যা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে উপকারী।




** চিয়া বীজে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের জন্য অতি উপকারী। রাতে এক চামচ চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরের দিন সকালে সেই পানি পান করলে স্মৃতিশক্তি বাড়তে পারে।
** আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকার। এই আখরোট দেখতেও মস্তিষ্কের মতো। প্রতিদিন ১টি আখরোট খেলে মস্তিষ্ক দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি এই শুকনো ফলটি স্মৃতিশক্তি ভালো করে অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে।




প্রতিদিন কমলা ও স্ট্রবেরি খেলে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমেঃ
সুস্থতার জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে প্রতিদিন যদি কমলা ও স্ট্রবেরি রাখা যায় তবে তা স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে। নানা কারণে আমাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস হতে থাকে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস হলো আলঝাইমার বা ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এই লক্ষণগুলো ভুক্তভোগীর প্রতিদিনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সনাক্ত করা যায়।




স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। সেগুলো হলো- অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ ভুলে যাওয়া, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ভুলে যাওয়া, সহজ কাজগুলো বুঝতে অসুবিধা হওয়া, ঘোলাটে স্মৃতি, জিনিসপত্র ভুল জায়গায় রাখা এবং মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া।
নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, স্ট্রবেরি এবং কমলার মতো কিছু ফল স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেয়া যাক এই দুই ফল কীভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমায়-




স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমায়
যারা স্ট্রবেরি, কমলা, মরিচ এবং আপেলের মতো ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন অর্ধেকটা হলেও খায় তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার ভয় কম থাকে। কারণ এগুলো তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি ২০ শতাংশ কমাতে পারে। এমনটাই বলা হয়েছে গবেষণায়।
ফ্ল্যাভোনয়েড প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যৌগিক এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি না করলে তা স্মৃতিশক্তি দুর্বল করতে ভূমিকা রাখতে পারে।




গবেষণার বিবরণ
গবেষণার শুরুতে ৪৮ গড় বয়সের ৪৯, ৪৯৩ জন নারী এবং ৫১ গড় বয়সের ২৭,৮৪২ পুরুষের ওপর জরিপ চালানো হয়। তারা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন খাবার কতবার খেয়েছে সে সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়। তাদের বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড গ্রহণের পরিমাণ প্রতিটি খাবারের ফ্লেভোনয়েড কন্টেন্টকে তার ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা গুণ করে গণনা করা হয়েছিল।
নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, কিছু মশলা এবং হলুদ বা কমলা ফল এবং শাকসবজিতে পাওয়া ফ্লেভোনয়েডের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক গুণাবলী রয়েছে এবং এটি স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করেছিল। যা বয়সের তুলনায় তিন থেকে চার বছরের ছোট হওয়ার সমতুল্য।
প্রতি ১০০ গ্রাম মরিচে প্রায় ৫ মিলিগ্রাম ফ্ল্যাভোন থাকে। ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি এবং চেরিতে পাওয়া অ্যান্থোসায়ানিন স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্লুবেরিতে প্রায় ১৬৪ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন থাকে।




বিশেষজ্ঞ মতামত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলেন, ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ রঙিন খাদ্য গ্রহণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির জন্য একটি ভালো উপায় বলে মনে হয়। আমাদের গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক। কারণ আমরা দেখতে পেয়েছি যে আপনার খাদ্যে সাধারণ পরিবর্তনগুলো কীভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, গবেষণায় আমরা আরো দেখতে পেয়েছি যে, যারা প্রতিদিন অন্তত অর্ধেকটা কমলা, মরিচ, সেলারি, আঙ্গুর, আপেল এবং নাশপাতি খেয়েছেন তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের তুলনায় বেশি তীক্ষ্ণ।



